এই ছেলে আর আমি নাকি ঢাকা কলেজে এক সাথে পড়ছি, শুধু তাই না একই সেকশনেই নাকি পড়ছি। কিন্তু কলেজ লাইফে তাকে চেনা তো দূরের কথা একদিনের জন্যও দেখি নাই। এর মুল কারন ঢাকা কলেজে সর্বসাকুল্যে আমি মনে হয় দুইদিনই ক্লাস করছিলাম। যাই হোক সে নাকি ইউনিভার্সিটিতেও আমার এক ব্যাচ জুনিয়র ছিল। পরিতাপের বিষয় ইউনিভার্সিটিতেও আমি তাকে একবারের জন্যও দেখি নাই, সেও আমারে দেখে নাই, দেখলেও চিনতো না বলে আমার বিশ্বাস। গ্রাজুয়েশনের বহুবছর পরে তার সাথে আমার দেখা আমার এক ছোট ভাই, প্রতাপশালী কমিশনারের শ্বশুর বাড়িতে ঈদের দাওয়াতে। আমি এমনিতেই আগ বাড়ায় কথা বলা মানুষ না, তার উপর এই ছেলের কথা সেইদিন বেগতিক লাগতেছিল। একটা কথা মনে আছে, বলতেছিল সে একটা প্রাডো কিনে সেইটা নিয়ে উবার করবে। এমন উবার ড্রাইভারকে কিছুটা এভয়েড করে জলি বয় টফির সাথে গল্প করে সেদিন বিদায় নিছিলাম। এরপর দিনকাল অনেক পরে বিভিন্ন কমন আড্ডায় বেশ কয়েকবার তার সাথে আমার দেখা হয়, কথা হয়। দেখা হইলেই সে বলে ভাই, চাকরি আর ভাল লাগে না, আপনার এইখানে জয়েন করব। আমি ভাবি মশকরা চলে বুঝি। মশকরা করতে করতে বছর দুয়েক কেটে যায়। এই মশকরার মধ্যে আমি তাকে নিয়ে ওয়্যারহাউজে কি কি করি, কি কি করতে চাই এইসব আলোচনা চালাই প্রায় ৬ মাস। তারপর কিছুটা সিরিয়াস হয়ে তাকে অফার করতে পারি সেই পজিশনের সব নেগেটিভ দিক তাকে বলতে থাকি যাতে কত কষ্ট তাকে করতে হবে সেইটা যেন ঠাওর করতে পারে। সব শুনে সে বলে এগুলি তার কাছে তুরি। মনে হইল সে পারবেই। নাজমুল ভাইকে বললাম, বিনা বাক্যে জানাইল, দেখ যা ভাল মনে কর, সিনথিয়া আপাও বলল ইটস্ আপ টু ইউ। এইচ আর অফার লেটার দিয়ে দিল। বিদ্যুৎ গতিতে সাইন হয়ে ফেরত আসলো। কিন্তু ঘটনা ঘটল কয়েকদিন পরে। রোজার মধ্যে একদিন গাড়ি ঠিক করার জন্য আমি প্রায় সারাটা দিন ইস্কাটনে ছিলাম, প্রায় কোন কারন ছাড়াই আলম সাহেব আমার সাথে সময় কাটাইলো। কয়েকবার জিজ্ঞেস করলাম কিছু বলবা, উত্তর আসলো; না ভাই, হুদাই। পরে ফারহানের বাসায় ইফতার শেষে যখন ফিরতেছি সে জানাইলো তার একটা সুইডিশ কোম্পানিতে চাকরি হইছে। রিপোর্টিং সুইডেনে, ফ্রিকোয়েন্ট ট্রাভেল করতে হবে সুইডেনে। স্যালারি প্যাকেজে প্রায় ডাবল আমার এখানকার থেকে। কি করবে আমাকে জিজ্ঞেস করল। আমার সহজ উত্তর ছিল, ইউ মাস্ট টেক দ্যা অপরচুনিটি। বলল ভাই, কি করব বুঝতেছি না, একদিন সময় দেন। বললাম আরও সময় নাও। যাই হোক সে বেশি সময় না নিয়ে পরেরদিন জানায় দিল, ভাই আপনার সাথেই কাজ করব। এই সেই রিয়াজুল আলম, যে মাত্র এক বছর ধরে আছে আমাদের সাথে, কিন্তু এত্ত কাজ করছে এই কয়েকদিনে, মনে হয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে আছে।
যাই হোক আমি ইন্টারভিউ আর রিক্রুটমেন্টে খুবই কম পার্টটিসিপেট করি। আসলে খুব ভাল না এই কাজে। তবে এই পর্যন্ত যে কয়েকটা করছি সবগুলা রিক্রুটমেন্ট আমি দীর্ঘ সময় নিয়ে করছি। আমার সব রিক্রুটমেন্ট এক একটা বড় গল্প। কিছুদিন আগে এক ইনভেস্টর আমারে জিজ্ঞেস করতেছিল আপনাদের এইচ আর রিটেনশন রেট কেমন? বলছিলাম দেখেন, আমরা সাজগোজে সবাইকে পরিবার হিসেবে ট্রিট করি, আর পরিবার ছেড়ে তো কেউ যেতে চায় না। একদম যে যায় না তা না, কিন্তু সেই সংখ্যাটা খুবই কম।